নিজস্ব প্রতিবেদক : চালের দাম বাড়ায় গত ছয় মাসে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৫ লাখের বেশি। অর্থনীতি নিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অব ইকোনোমিক মডেলিং (সানেম) এর ত্রৈমাসিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যালোচনায় এ তথ্য ওঠে এসেছে। কর্মসংস্থানবিহীন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কিভাবে হচ্ছে সেই প্রশ্ন রেখে, মূল্যস্ফীতির তথ্য বাস্তবসম্মত নয় বলে উল্লেখ করেছে সানেম। ব্যাংকিং খাতের দুর্দশা নির্বাচনী বছরে সরকারের জন্য নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে সতর্ক করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ বছর দুই দফা বন্যায় চালের উৎপাদন কমেছে ৯ লাখ টনের বেশি। চাহিদা সামাল দিতে আমদানির সিদ্ধান্তে কিছুটা বিলম্বিত ছিল। এমন সুযোগ ছাড়েনি অসাধু ব্যবসায়ীরা। লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে চালের দাম। দরিদ্র মানুষের খাবারের বড় অংশ জুড়ে চাল থাকায় বিপাকে পড়েছেন তারা। বাড়তি দামের কারণে খরচ বেড়ে নতুন করে ৫ লাখ ২০ হাজার মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে চলে গেছে। গেল ছয় মাসের হিসেবে দারিদ্রের সংখ্যা বেড়েছে ০.৩২ শতাংশ, সংখ্যার হিসেবে যা ৫ লাখ ২০ হাজারের মত। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের নীতিতে পরিবর্তনের পরামর্শ সানেমের।
শুধু চাল নয় শাকসবজি, মাছ, মাংস থেকে শুরু করে বাসা ভাড়া, পোশাক, পরিবহন ভাড়া, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খরচ, গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিলের মত খাদ্যবর্হিভূত খরচও বেড়েছে। এসবের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে পরিসংখ্যান ব্যুরো মূল্যস্ফীতির যে তথ্য প্রকাশ করে তা বাস্তবতার সাথে মিলে নেই বলে মনে করে সানেম। জনসাধারণের ভোগ ব্যয়ের ওপর ভর করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়লেও দুটি প্রধান সূচক রপ্তানি ও রেমিটেন্স আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল না গেল অর্থবছরে। তারপরও কিভাবে প্রবৃদ্ধি ৭.২৮ শতাংশ হলো সেই প্রশ্ন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হানের।
ত্রৈমাসিক পর্যালোচনায় সামষ্টিক অর্থনীতির চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, চালের আমদানি বাড়ায় বৈদেশিক বাণিজ্য ভারসাম্যে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আমদানি ব্যয়ের জন্য চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে ডলারের দাম। আগামী দিনগুলোতে ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে মূলধনী যন্ত্রাপতি আমদানিতে প্রায় ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও সেই অনুপাতে বেসরকারি বিনিয়োগ না হওয়ায় আমদানির নামে অর্থপাচারের আশঙ্কা করছে সানেম। সরকারকে এ বিষয়ে নজর দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
ব্যাংকিং খাতের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, অর্থনীতির জন্য আগামীতে এটি অশনিসংকেত বয়ে আনবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থমন্ত্রণালয়) গুলো দুর্বলতা আর সীমিত ক্ষমতার কারণে ব্যাংকগুলোর এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আশপাশের দেশগুলোর মতো বাংলাদেশ ব্যাংককেও স্বতন্ত্র ক্ষমতা দেয়া উচিত বলে মনে করেন সানেম। সেই সাথে ঋণ কেলেঙ্কারির সাথে যারা জড়িত তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। না হলে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশয় নিয়ে এরা আবারো সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট করবে, যা আগামী নির্বাচনের আগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
নির্বাচনী বছরকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অস্থিরতা অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিবে বলে মনে করে সানেম। এছাড়া বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি (ফাও) এর তথ্য অনুযায়ী, এ বছর বিশ্বের যে কয়টি দেশে চালের উৎপাদন কম হবে তার একটি বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে চাল উৎপাদনে চতুর্থ অবস্থানে আছে। বিশ্বব্যাপী ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার প্রবণতা ও মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারা চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ হবে বলে সানেমের পর্যালোচনায় ওঠে এসেছে।