নিজস্ব প্রতিবেদক : মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে কর্মসংস্থান সহায়ক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য ভারসাম্যমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের যোগান বাড়ায় কাঙ্খিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে আশা করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। তবে সরকারের ঋণ চাহিদা মেটাতে সঞ্চয়পত্রের ওপর অতি নির্ভরশীলতা আর্থিক নীতি প্রণয়নে বাঁধা তৈরি করছে বলে মনে করেন তিনি।
চলতি বছরের জন্য ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭.৪ শতাংশ। গেল অর্থবছরের চেয়ে প্রবৃদ্ধি বেশি অর্জন করতে চাইলেও মূল্যস্ফীতিকে সাড়ে ৫ শতাংশের ঘরেই আটকে রাখতে চায় সরকার। এই লক্ষ্য অর্জনে মুদ্রা সরবারহে নীতি সহায়তা দিতে জুলাই থেকে ডিসেম্বর, এই ৬ মাসের জন্য প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করলো বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলতি বছরের মে পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশ (যদিও জানুয়ারি থেকে জুন এই সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬.৪ শতাংশ) অর্জিত হওয়ায় নতুন মুদ্রানীতিতে এই হার কিছুটা বাড়িয়ে ১৬.২ শতাংশ ধরা হয়েছে। অন্যদিকে সরকার ব্যাংক ঋণ না নেয়ায় (জানুয়ারি থেকে জুন সময়ে সরকারের ঋণ নেয়ার লক্ষ্য রাখা হয়েছিল ১৬.১ শতাংশ, তবে এ সময়ে ঋণ না নেয়ায় তা ঋণাত্মক ১৬.২ শতাংশ) এ খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৩.৮ শতাংশ।
লক্ষ্যমাত্রা প্রসঙ্গে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, আমরা চাই উচ্চ প্রবৃদ্ধির সাথে মূল্যস্ফীতিকেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে। তাই ঘোষিত মুদ্রা নীতিকে তিনি ভারসাম্যমূলক বলে মন্তব্য করেন। এবারে বেসরকারি খাতে যে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে তাতে করে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৭.৪ শতাংশ অর্জিত হবে বলে তিনি আশাবাদী। ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, গেল ৬ মাসে (জানুয়ারি থেকে জুন) সরকারি বেসরকারি খাতে যে ঋণ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে তাতে করে এবারে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে সেটি বেশি। তাই ঘোষিত মুদ্রানীতিকে তিনি সম্প্রসারণমূলক বলে মন্তব্য করেন।
বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সরকার ব্যাংক থেকে কার্যত কোনো ঋণ নেয়নি। গেল বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে অনেক বেশি। উচ্চ সুদের সঞ্চয়পত্র সরকারের ঋণ গ্রহণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত মাধ্যম হতে পারে না উল্লেখ করে সুদ হার কমানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ প্রসঙ্গে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হওয়ায় মুদ্রানীতি প্রণয়ণে কিছুটা সমস্যার মুখে আছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর সুদ হার বাজারের সাথে সমন্বয় করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়িয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জনে পরোক্ষ ভূমিকা রাখে প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স। গেল অর্থবছর এই আয় কমে আসার পেছনে মোবাইল ব্যাংকিংকে ব্যবহার করে ডিজিটাল হুন্ডির কথা শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রমাণও পেয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এর প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে করা তদন্তে সন্দেহজনক ৫ হাজার মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খোঁজ পেয়েছে। এগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা দাবি করেন, অনিয়ম ও খেলাপি ঋণের কারণে যেসব ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে সেগুলোর অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে আছে। বর্তমানে ১৫টির বেশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়ার পরও এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো উন্নতি হয়নি সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, অনিয়ম দূর হয়নি এটা তিনি বিশ্বাস করেন না। আর এসব প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ বেড়েছে কিনা সে বিষয়ে তার জানা নেই। ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, আর যাতে কোনো ধরনের রক্তক্ষরণ (অনিয়ম বুঝাতে) না হয় সেজন্যই পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।